ইনকিলাব মঞ্চের স্পষ্ট অবস্থান: যোগ্য না হয়ে নির্বাচন নয়


 



ঢাকা-৮ আসনে আগামী নির্বাচনে ইনকিলাব মঞ্চ থেকে কেউ প্রার্থী হবে না এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্ল্যাটফর্মটির সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেছেন, যোগ্যতা অর্জন না করে কেবল সহানুভূতির ভিত্তিতে নির্বাচনে নামার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তিনি স্পষ্ট করেন, ইনকিলাব মঞ্চ কখনোই সিমপ্যাথিনির্ভর রাজনীতি করবে না।



সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চলমান অবরোধ কর্মসূচি থেকে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুর সোয়া ২টা থেকে শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে ইনকিলাব মঞ্চ। গত শুক্রবার থেকে প্রতিদিন এই কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি।



আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, অনেকেই অনুরোধ করছেন যাতে ঢাকা-৮ আসনে ইনকিলাব মঞ্চের কেউ প্রার্থী হয়। কিন্তু ইনকিলাব মঞ্চ কোনো রাজনৈতিক দল নয়; এটি একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম। শহীদ ওসমান হাদি নিজেও ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। আমরা কেবল তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।



তিনি আরও বলেন, শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চ কখনো ক্ষমতার মুখাপেক্ষী হবে না, কখনো নিজেকে ক্ষমতার কাছে ইজারা দেবে না। ওসমান হাদি ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসেননি; তিনি এসেছিলেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনীতির কাঠামো নির্মাণ করতে। সেই কাজই আগামী দিনগুলোতে ইনকিলাব মঞ্চ করে যাবে।



রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত কিংবা এনসিপি—সব দলেরই নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকবে। কিন্তু জনগণ এখন চায় শহীদ ওসমান হাদির হত্যার বিচার। যদি আপনারা এই দাবিতে সোচ্চার না হন, জনগণই আগামী নির্বাচনে আপনাদের জবাব দেবে।



ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব বলেন, যারা কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে শহীদ ওসমান হাদির নাম ব্যবহার করতে চায়, তারা ব্যর্থ হবে। জনগণ আবেগ নয়, অতীত ও বর্তমানের হিসাব মিলিয়েই ভোটের সিদ্ধান্ত নেবে।



তিনি অভিযোগ করে বলেন, যারা খুনিদের জামিন করিয়েছে কিংবা টক শোতে গিয়ে শহীদ ওসমান হাদিকে ‘গিনিপিগ’ বলে অপমান করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জানাজায় অংশ নেওয়া বা কবর জিয়ারত করলেই দায় শেষ হয়ে যায় না দায় স্বীকার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হয়।



উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এই শীতের মধ্যে তারা কেউ শাহবাগে এসে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। রাষ্ট্র যেন কম্বলের নিচে ঘুমিয়ে আছে, আর জনগণ এখানে রাষ্ট্রের পাহারাদার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দাবি করেন, ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের নাম প্রকাশ করা হোক। জনগণই তখন তাদের নিরাপত্তা দেবে।



শাহবাগ অবরোধ নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও বিকল্প পথ রয়েছে। এখানে যারা অবস্থান করছেন তারা কেউ ভাড়াটে নন, টাকা নিয়ে বসে নেই। শীত উপেক্ষা করে তারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন ন্যায়বিচারের দাবিতে।



আইন উপদেষ্টার দিকেও আঙুল তুলে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মামলার আসামির জামিন দেওয়া হয়েছে। আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত—এই দায় কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বে না ইনকিলাব মঞ্চ—এই বার্তাই আজ আবার স্পষ্ট করে দেওয়া হলো।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ